কক্সবাজার, শনিবার, ৪ মে ২০২৪

উখিয়ায় গোলাগুলিতে দুই রোহিঙ্গা নিহতের দুই দিনেও মামলা হয়নি

কক্সবাজারের উখিয়ার বালুখালী আশ্রয়শিবিরে রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীদের সঙ্গে আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) সদস্যদের গোলাগুলিতে দুই রোহিঙ্গা নিহতের ঘটনার পর দুই দিন পার হয়ে গেছে। তবে আজ সোমবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত থানায় কোনো মামলা হয়নি।

এপিবিএনের দাবি, এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত তিন সন্ত্রাসীকে আটক করা হয়েছে। তবে পুলিশ বলছে, আটক কাউকে এখনো থানায় হস্তান্তর করা হয়নি। এদিকে ওই ঘটনার পর থেকেই ক্যাম্পের সাধারণ রোহিঙ্গাদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।

আশ্রয়শিবিরের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা ৮ এপিবিএনের মুখপাত্র ও সহাকারী পুলিশ সুপার (অপারেশন ও মিডিয়া) আজ দুপুরে বলেন, সন্ত্রাসীদের ধরতে আশ্রয়শিবিরে অভিযান চলছে। হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় জড়িত সন্দেহে তিন রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীকে আটক করা হয়েছে। তবে এখনই তাঁদের পরিচয় বলা যাচ্ছে না। মামলার প্রস্তুতি চলছে।

উখিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ মোহাম্মদ আলী বলেন, আজ দুপুর ১২টা পর্যন্ত আশ্রয়শিবিরে দুই রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী নিহতের ঘটনায় থানায় কোনো মামলা হয়নি। এ ঘটনায় আটক কাউকে থানায় হস্তান্তরও করা হয়নি।

গত শুক্রবার রাত পৌনে ১০টার দিকে উপজেলার পালংখালী ইউনিয়নের বালুখালী আশ্রয়শিবিরের (ক্যাম্প-৮ পশ্চিম) বি-৬২ ব্লক ও বি-৪৯ ব্লকের মাঝামাঝি এলাকায় গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। এ সময় ওই আশ্রয়শিবিরের বি-২৮ ব্লকের বাসিন্দা মোহাম্মদ নুর ওরফে ইউনুছের ছেলে সলিম উল্লাহ (৩৩) ও গোলাম কাদেরের ছেলে রেদোয়ান (২৮) নিহত হন। গুলিতে নিহত দুজনই পুলিশের তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী। গোলাগুলির ঘটনায় আরেক রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীসহ আশ্রয়শিবিরের এক নারী গুলিবিদ্ধ হন।

পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শী রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শুক্রবার রাতে ৪০ থেকে ৫০ জনের রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীদের একটি দল আশ্রয়শিবিরের ব্যবস্থাপনা কমিটির মাঝি (রোহিঙ্গা নেতা) মোহাম্মদ রফিককে হত্যার উদ্দেশ্যে অস্ত্র নিয়ে মহড়া শুরু করে। পরে আশ্রয়শিবিরের বাসিন্দাদের মাধ্যমে খবর পেয়ে এপিবিএনের সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে অভিযান শুরু করলে সন্ত্রাসীরা ‘পুলিশ, পুলিশ’ বলে চিৎকার করে। একপর্যায়ে সন্ত্রাসীরা এপিবিএন সদস্যদের লক্ষ্য করে গুলি ছুড়তে থাকে। আত্মরক্ষার্থে এপিবিএন সদস্যরাও পাল্টা গুলি ছোড়েন। এ সময় দুই পক্ষের গোলাগুলিতে দুই রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী ঘটনাস্থলে মারা যান। পরে ঘটনাস্থলে তল্লাশি চালিয়ে পাওয়া যায় দেশে তৈরি ১টি বন্দুক, ১টি ম্যাগাজিন ও ৭০টি গুলি।

উখিয়া থানার ওসি শেখ মোহাম্মদ আলী বলেন, ঘটনার পরদিন কক্সবাজার সদর হাসপাতালের মর্গে নিহত দুই রোহিঙ্গার ময়নাতদন্ত শেষে লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছিল। গুলিতে আহত রোহিঙ্গা নারী সেতারা বেগম উখিয়ার কুতুপালং আশ্রয়শিবিরের এমএসএফ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

এদিকে ঘটনার পর দুই দিন পার হয়ে গেলেও কোনো সন্ত্রাসী গ্রেপ্তার না হওয়ায় সাধারণ রোহিঙ্গারা আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন রোহিঙ্গা নারী বলেন, ওই দিন এপিবিএনের সঙ্গে গোলাগুলিতে অংশ নেওয়া অনেক রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী সন্ধ্যার পর ক্যাম্পে এসে ঘুরাফেরা করেছেন। এতে রোহিঙ্গা নারীসহ অনেকেই ভয়ে ঘর থেকে বের হতে পারছেন না।রোহিঙ্গা নেতা ও আশ্রয়শিবিবের বাসিন্দাদের দাবি, মাদক ব্যবসার টাকা ভাগাভাগি ও আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে আশ্রয়শিবিরে হত্যাকাণ্ডের ঘটনা বেড়েই চলছে। এসবের জেরে গত ৪ মাসে কুপিয়ে এবং গুলি করেঅন্তত ১২ জন রোহিঙ্গা নিহত হয়েছেন।

বালুখালী আশ্রয়শিবিরের রোহিঙ্গা নেতা কলিম উল্লাহ বলেন, কয়েক দিন ধরে সন্ধ্যার পর আশ্রয়শিবিরে ‘ভুতুরে’ পরিবেশের সৃষ্টি হয়। এ সময় রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীরা আশ্রয়শিবিরের ঘরে ঘরে গিয়ে চাঁদাবাজি করে। অন্যথায় সন্ত্রাসীরা রোহিঙ্গা নারীদের তুলে নিয়ে ধর্ষণের হুমকি–ধমকি দিচ্ছে।

বিশেষ করে, যাঁরা মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত, তাঁদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের চাঁদা দাবি করা হয়। চাঁদা না দিলে অপহরণ, এমনকি হত্যার হুমকিও দেওয়া হচ্ছে। এসব ঘটনায় সাধারণ রোহিঙ্গারা উদ্বিগ্ন। সূত্র প্রথম আলো

পাঠকের মতামত: